ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবারও সক্রিয় হচ্ছে সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান গং। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর ছত্রছায়ায় নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত সেই শিক্ষক তার অপকর্মের প্রসার ঘটাতে আবারো উঠেপড়ে লেগেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরূদ্ধে টাকা দিয়ে কথিত সাংবাদিকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিন ইমেজদারী শিক্ষকদের বিরূদ্ধে মিথ্যাচার ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী উপাচার্য হয়ে আসার এক বছরের মাথায় তার আস্থাভাজন হয়ে উঠে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান। আস্থাভাজন হয়ে উঠার পরপরই সে শিক্ষক নিয়োগ, চাকরির আশ্বাস দিয়ে ডে লেবার সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তিকরন, অর্থের বিনিময়ে ছাত্রলীগের কমিটি আনায়ন সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। একাধিকবার তার নিয়োগ সংক্রান্ত অডিও ফাঁস হয়। উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় বারবার পার পেয়ে যান তিনি। সাবেক উপাচার্যের একান্ত আস্থাভাজন হওয়ায় একাধিক অভিযোগ থাকার পরেও তার বিরুদ্ধে কোন তদন্ত কমিটি করেনি সাবেক প্রশাসন। তবে সম্প্র্রতি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একইসাথে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান।
গত ২১ আগস্ট ড. রাশিদ আসকারীর উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়। দ্বিতীয়বার তাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে পড়ে ড. মাহবুবব। ইউজিসিসহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে দৌড়ঝাপ করেন ড. মাহবুব। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পরপরই ভাটা পড়ে যায় তার অপকর্মে। আতঙ্কে আছেন তার অভিযোগনামা প্রকাশ হওয়া নিয়ে। বেশ কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকে তার পদচারণা। তবে সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার অপকর্মের মাত্রা।
এসব অপকর্মের প্রচারণায় মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কাজে লাগাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কথিত ভূয়া সাংবাদিক আশিক আব্দুল্লাহকে দিয়ে। জানা যায়, নামে-বেনামে কয়েকটি ভূয়া নিউজ পোর্টাল থেকে নিউজ করে সাংবাদিক পরিচয় বনে গেছেন এ শিক্ষার্থী। এসব পোর্টাল থেকে বেশ কয়েকটি আইডি কার্ডও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ক্লিন ইমেজধারী বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত রিপোর্ট করে যাচ্ছেন। ড. মাহবুবের পৃষ্ঠপোষকতায় তার উত্থান ঘটে। কথিত এই সাংবাদিককে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিউজ করিয়ে এবং ব্লাকমেইল করে মাহবুব তার কার্য সিদ্ধি করেন। এর বিনিময়ে আশিক আব্দুল্লাহ মাসে মোটা অংকের টাকাও পান। কোন ডকুমেন্ট ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ও ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন এ সাংবাদিক পরিচয় দেয়া এ শিক্ষার্থী।
তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির প্রমান মিলেছে। সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে বিকাশ নম্বর দিয়ে টাকা নেওয়ার এমন কয়েকটি প্রমান পাওয়া গেছে। প্রতিবেদকের কাছে এর স্কীন শর্ট সংরক্ষিত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, ফেইক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের উত্তক্তকরণ সহ নানা অপকর্মের ফেসবুক স্কীনশর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব স্কীনশটে বিভিন্ন সময় ভূক্তভোগীদের থেকে ব্লাকমেইল করে নিউজ করার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয় আব্দুল্লাহ ।
গত জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীল প্রেমালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটলে কথিত ঐ সাংবাদিক তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। ‘চাঁদা না দিলে নিউজ হবে’ এমন কথায় শাসিয়ে তার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন তিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী নূর আলমকে শিবির তমকা লাগিয়ে তাকে কয়েকটি শিবির সংশ্লিষ্টতার স্ক্রিনশর্ট দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন। পরে ঐ ছাত্রলীগ কর্মী তাকে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে নানা অজুহাত তুলে চাঁদা দাবিরও অভিযোগ উঠেছে। যা গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন অনলাইনে তার যাবতীয় অপকর্মের নিউজ হতে দেখা গেছে। এসব নিউজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হলে তার বিরুদ্ধে অনেকের বিরুপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে কথিত এ সাংবাদিক পরিচয় দেয়া এ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদক সম্রাট নামে খ্যাত ডজন খানেক মাদক মামলার আসামী সাদ্দাম হোসেনের সাথে যোগসাজস করে বিভিন্ন আবাসিক হলে মাদক সরবরাহ করেন এ সাংবাদিক। এছাড়া বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে ম্যাসেঞ্জারে ছাত্রীদের উত্তক্ত করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীর সাথেও তার অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। ওই ছাত্রীর সাথে ক্যাম্পাসে ওপেনে অশ্লীল কর্মকান্ডেরও অভিযোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে প্রেমঘটিত ও মাতলামির কারনে কয়েকবার সহপাঠী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে মারও খেয়েছেন এ শিক্ষার্থী। তার এসব বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রক্টর অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন তাকে বেশ কয়েকবার আটক করলেও আবারও ছেড়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আসকারীর সাথেও তার কয়েকটি ছবি দেখা গেছে। এসব ছবি ব্যবহার করে ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে কথিত এ সাংবাদিক। সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের সহায়তায় বর্তমানে সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ড. মাহবুবর রহমানের নোংড়া রাজনীতিকে আবারো জাগিয়ে তুলতে লাগামহীন হয়ে কাজ করছে সাংবাদিকতার মুখোশধারী এ শিক্ষার্থী। ড. মাহবুবের হীন উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তার এই অপসাংবাদিকতার বলি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিন ইমেজধারী শিক্ষক-ছাত্র নেতারাও। এর পরেও তার বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতীশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
Leave a Reply