রিয়াদুল ইসলাম,নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
পুরো বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি সংক্রমক করোনা ভাইরাস।এর বাইরে নেই বাংলাদেশও,এখানেও করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধ পাচ্ছে দিনের পর দিন।কেউ এই প্রানঘাতি করোনা আক্রান্ত হয়ে জীবন হারাচ্ছেন,আবার কেউ প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন ও চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠেছেন। এমনিভাবে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম মাহাদী ও তার ভাই।বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন,সতর্কতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে উঠেছেন দুজনেই,জয় করেছেন এই মহামারি করোনা ভাইরাস।কিভাবে করোনা থেকে মুক্তি পেলেন এ নিয়ে নিউজ ৭১ এর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা রিয়াদুল ইসলাম এর সাথে কথা বলেন মাহাদী।
মাহাদী নিউজ ৭১কে বলেন,
আমি ও আমার ভাই মাজহার দুই/তিন দিন জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। এরপর থেকে খাবারের স্বাধ এবং নাকের স্মেল শক্তি হারিয়ে ফেলছিলাম। ২৯ মে কভিড-১৯ টেস্টের স্যাম্পল দিয়ে আসি এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েও মানসিকভাবে যথেষ্ট স্ট্রং ছিলাম। অল্প কিছু মানুষ-জন ছাড়া তেমন কারো সাথে শেয়ার করিনি কারন অনেকেই পজিটিভ শুনে ভয় পেয়ে যায় আর তার ভয় দেখে আমার মনোবল ভেঙে যেতে পারে সেজন্য।
করোনা আক্রান্ত কালীন কি কি ওষুধ সেবন করেছিলেন? এই প্রশ্নোত্তরে মাহাদী বলেন,
“১. Scabo 6 (সিম্পটম বুঝতে পেরে রিপোর্ট আসার আগেই একসাথে ২টা খেয়ে ছিলাম।)
২. Zinc B (1+0+1)
৩. Ceevit 250mg (দিনে ৪/৫টা করে খেতাম)
৪. Cavic-C (প্রতিদিন ১টা)”
ঘরোয়া ট্রিটমেন্টরত অবস্থায় কি কি খাবার খেয়েছেন? এ প্রশ্নে মাহাদী বলেন,
“ট্রিটমেন্ট এর কথা বলতে গেলে যেটা বুঝতে পারছি মানসিক ভাবে স্ট্রং থাকার বিকল্প নেই। যদিও মারাত্মক কোনো সমস্যা ছিলোনা প্রয়োজনে ICU সাপোর্ট লাগলেও ফিরে আমি আসবোই এমন একটা চিন্তাধারা তৈরি করে নিয়েছি। আর আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস রেখেছি।
যা যা খেয়েছি,
১. আদা, লেবু, দারচিনি, এলাচি, গোল মরিচ, লং, তেজপাতা, রসুন এগুলা মিক্স করে গরম পানির ভাপ নিয়েছি দিনে ৭/৮ বার।
(আর ভাপ নেয়ার সিস্টেম হচ্ছে গরম হাড়ির উপর মুখ করে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া। এই সময়ে মাথার উপর একটা তোয়ালে দিয়ে হাড়ি ঢেকে বসতে হয় যাতে ভাপ অন্য কোথাও উড়ে যায় না।)
২. আদা,রসুন,লং,এলাচি,কালোজিরা, এসব মিক্স করে গরম পানি করে ফ্লাক্সে রেখে দিতাম। কিছুক্ষন পর পর ফ্লাক্স থেকে পানি নিয়ে লেবু চিবিয়ে চা এর মত করে খেতাম।
৩. প্রতিদিন গরুর দুধ এক গ্লাস, সিদ্ধ ডিম ১টা এবং মাল্টা ১টা আর সাথে আপেল/লিচু/আনারস যেকোনো একটা আইটেম থাকতো।
৬. সব সময় কুসুম গরম পানি খাওয়ার চেষ্টা করেছি। লেবু চিবিয়ে সরবতের মত করে খেয়েছি।
৭. প্রচুর শাক-সবজি, মাছ-মাংস খেয়েছি। লেবু দিয়ে ভাত খেয়েছি।
৮. যেদিন সুযোগ হয়েছে ছাদে গিয়ে সূর্যের তাপ গ্রহন করেছি ১৫-২০ মিনিট।
উপরুক্ত সবকিছুতে রয়েছে ভিটামিন-সি এবং ডি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি করে ভাইরাসের সাথে ফাইট করে।”
সতর্কতা অবলম্বনের প্রশ্নে শরীফুল মাহাদী বলেন,
“আমরা ২ ভাই পাশাপাশি ২ রুমে ছিলাম এবং এই ২ রুমের সাথে সংযুক্ত একটা বাথরুম ও বেসিন ছিলো যা শুধু আমরা ২ জন-ই ব্যাবহার করতাম। বাকী সবাই ভিন্ন ভিন্ন বাথরুম ইউজ করতো।
২. বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় ব্লিচিং মিক্সড পানি স্প্রে করতাম।
৩. রুমের স্পর্শ হতো এমন সব স্প্রে করতাম ৩/৪ বার করে।
৪. দিনে একবার ব্লিচিং মিক্সড পানি দিয়ে আমাদের রুম পরিষ্কার করতাম। বাকিরা সবাই নিজ নিজ রুম পরিষ্কার করতো। এভাবে পুরো ঘর পরিষ্কার হয়ে যেতো।
৫. রুমে ডিটারজেন্ট পাউডার মিক্সড পানির বালতি রাখতাম। আমাদের ২ জনের প্লেট,গ্লাস,বাটি সহ যা যা ছিলো সব ইউজ করেই ওই বালতির পানিতে চুবায়ে রাখতাম।
৬. রুমে ঢাকনা যুক্ত ময়লার বিন রেখেছি। আমাদের ২ জনের ব্যবহৃত সবকিছু এই বিন ফেলতাম এবং সাথেসাথে ঢাকনা আটকায়ে দিতাম। মাঝে মাঝে বিন এর ভেতরেও স্প্রে করতাম।
৭. আমাদের স্পর্শ করা এমন কিছু রুম থেকে বের করে কাউকে দিলে সেটা স্প্রে করে দিতাম।
৮. অতিরিক্ত একটা চুলা ছিলো সেটা আমাদের রুমে নিয়ে আসছিলাম। গরম পানি, মসলা পানি, ভাপ সব কিছু ওই চুলা দিয়ে করছি। এতে রুমের বাইরে যাওয়া লাগেনি।
৯. প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে গোসল করেছি।
১০. উপরুক্ত সব কাজ আমরা দুই ভাই মিলে আমাদের রুমে থেকেই করেছি। এতে ভাইরাস অন্য কারো মধ্যে ছড়ানোর সম্ভাবনা হয়নি। রুম থেকে বের হয়ে শুধু খাবার নিয়ে আসতাম। তাও আমাদের ২ জনের আলাদা চামচ ছিলো যেটা আমাদের রুমেই থাকতো। এতে বাইরে কোনো কিছু স্পর্শ হতোনা”
সবশেষে তিনি বলেন,” যেকোনো বিপদ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং এর ফয়সালা তিনিই করে দেন। মানসিকভাবে স্ট্রং থেকে, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা রেখে সব নিয়ম কানুন মেন চলেছি বলেই সুস্থ হতে পেরেছি বলে মনেকরছি। আল্লাহ নিকট শুকরিয়া। আগামী ১১ জুলাই ২য় টেস্টের পর ২৮ দিন পূর্ণ হবে অর্থাৎ প্লাজমা ডোনেশনের জন্য সক্ষম হবো। AB+ প্লাজমা দিতে ইচ্ছুক”
Leave a Reply